এই অক্ষরগুলোর প্রকৃত অর্থ যাই হোক না কেন, কিছু সূরার শুরুতে এই ধরণের অক্ষরগুলো আসলে কুরআনের অলৌকিকতার প্রমাণ বহন করে। কুরআনের অনুরূপ সৃষ্টি করা আল্লাহর দাসদের জন্য অসম্ভব। যদিও তারা দৈনন্দিন জীবনে এক অপরের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে যেসকল বর্ণমালা ব্যবহার করে কুরআনও সেসকল বর্ণমালা দিয়েই রচিত হয়েছে। আর-রযি তার তাফসীরে আল-মুবার্রিদ ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আল-ক্বুরতুবিও আল-ফার্র’ ও ক্বুত্রুব থেকে অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। আয-যামাখশারি তার আল-কাশশাফ গ্রন্থে এই ধারণার সাথে সহমত প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও ইমাম ও গবেষক আবু আল-‘আব্বাস ইবনু তাইমিয়্যাহ এবং আমাদের শাইখ আল-হাফিয আবু আল-হাজ্জাজ আল-মিযযি এই মতের সাথে একমত পোষণ করেছেন। আল-মিযযি আমাকে বলেছেন যে এটা শাইখ আল-ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যারও মতামত। আয-যামাখশারি বলেছেন যে, “এগুলো কুরআনের শুরুতে কেবল একবার করেই আসে নি, বরং বারবার এসেছে, যার ফলে এই চ্যালেঞ্জটি (কুরআন অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে) অনেক বেশি মারাত্মক। একইভাবে অনেক কাহিনীই কুরআনে অনেকবারই উল্লেখ করা হয়েছে এবং কুরআনের অনুরূপ সৃষ্টির চ্যালেঞ্জও বিভিন্ন জায়গায় বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কোন স্থানে শুধুমাত্র একটি অক্ষর এসেছে, যেমন স্বদ, নুন এবং ক্বফ। কোন কোন স্থানে দুটি অক্ষর এসেছে যেমন
﴿حـم ﴾
(হা মিম) (৪৪:১) কোন জায়গায় তিনটি অক্ষর এসেছে, যেমন
﴿الم ﴾
(আলিফ লাম মিম) (২:১) কোন জায়গায় চারটি, যেমন,
﴿المر﴾
(আলিফ লাম মিম র) (১৩:১) এবং
﴿المص ﴾
(আলিফ লাম মিম স্বদ) (৭:১)।
কখনো এসেছে পাঁচটি, যেমন,
﴿كهيعص ﴾
(কাফ হা ইয়া ‘আইন স্বদ) (১৯:১) এবং
﴾حم – عسق﴿
(হা মিম। ‘আইন সিন ক্বফ) (৪২:১-২)
এরূপ হওয়ার কারণ হচ্ছে আরবী ভাষার শব্দগুলি এক, দুই, তিন, চার বা সর্বোচ্চ পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট।
যেসব সূরাগুলো এই অক্ষরগুলো দ্বারা শুরু হয়, সেগুলো আসলে কুরআনের অলৌকিকতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা প্রমাণ করে এবং যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তারা এটা ঠিকই জানেন। আল-ক্বুরআনের উনত্রিশটি সূরার শুরুতে এই অক্ষরগুলি এসেছে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন,
﴿الم ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ﴾
(আলিফ লাম মিম, এটা সেই গ্রন্থ [আল-ক্বুরআন]), যাতে কোন সন্দেহ নেই (২:১-২),
﴿الم – اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ – نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَـبَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ﴾
(আলিফ লাম মিম। আল্লাহ! লা ইলাহা ইল্লাহ হুয়া (আল্লাহ্ ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নয়), আল-হাইয়ুল-ক্বইয়ুম (যিনি চিরঞ্জীব, সকল সৃষ্টিকে যিনি ধারণ করেন ও সুরক্ষা প্রদান করেন)। তিনি এই গ্রন্থ (হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার ওপর সত্যসহ অবতীর্ণ করেছেন, যা এর পূর্বে যা এসেছে তার সমর্থক।) (৩:১-৩), এবং,
﴿المص كِتَـبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلاَ يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ﴾
(আলিফ লাম মিম স্বদ। (হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এই) গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমার ওপর, সুতরাং তোমার হৃদয় যেন সংকীর্ণ হয়ে না যায়) (৭:১-২)
আল্লাহ আরও বলেছেন,
﴿الر كِتَابٌ أَنزَلْنَـهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَـتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ﴾
(আলিফ লাম র। (হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এই) গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমার ওপর, যাতে করে তুমি মানুষদের বের করে আনতে পার, (অবিশ্বাস ও মূর্তিপূজার) অন্ধকার থেকে (আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ও ইসলামিক একত্ববাদের) আলোতে, তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে) (১৪:১),
﴿الم – تَنزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ ﴾
(আলিফ লাম মিম। অবতীর্ণ হয়েছে এমন এক গ্রন্থ [আল-ক্বুরআন] যাতে কোন সন্দেহ নেই, সমগ্রসৃষ্টি জগতের প্রভুর কাছ থেকে!) (৩২:১-২),
﴿حـم – تَنزِيلٌ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴾
(হা মিম। অবতীর্ণ হয়েছে সর্বাপেক্ষা দয়াময়, দয়ালু (আল্লাহ)র পক্ষ থেকে।) (৪১:১-২)
﴿حـم – عسق – كَذَٰلِكَ يُوحِي إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾
(হা মিম। ‘আইন সিন ক্বফ। শক্তিমান, তত্ত্বজ্ঞানী আল্লাহ এভাবে [হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তোমার ওপর প্রত্যাদেশ করেছেন যেভাবে [তিনি] তোমার পূর্ববর্তীদের ওপরও [প্রত্যাদেশ করেছিলেন]।)
আমরা ওপরে যা উল্লেখ করেছি তার সপক্ষে এধরণের আরও বহু আয়াত বিদ্যমান। আল্লাহই ভাল জানেন।
< পূর্বের পৃষ্ঠা ▬▬▬▬▬ পরের পৃষ্ঠা >
আমি অনেক ওয়েবসাইট ঘুরে দেখেছি, যারা কুরআনের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা কুরআনের শুরুতে এই অক্ষর গুলো নিয়ে অবান্তর কথা বলে। তারা বলে যে, যেহেতু এসবের কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই, তাই তারাও যে কোনো শব্দ ব্যবহারে আয়াল তৈরি করতে পারে।
যেমন,, ক,খ,গ,, a,b,c ইত্যাদি।